সোমবার (২২জুন) সকাল সাড়ে ১০টায় কমলনগর উপজেলা কমপ্লেক্সের সামনে কমলনগরে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের হয়রানি, অতিরিক্ত বিলের প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হয়েছে।
এসময় এলাকার দুই শতাধিক গ্রাহক সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে এ মানববন্ধনে অংশগ্রহন করেন।
গ্রাহকরা জানান, বকেয়া বিল পরিশোধ করার পরও তাদের চলতি বিলের সাথে বকেয়া বিল একত্রিত করে বিল তৈরী করে পাঠায়। এতে গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। মার্চ মাস থেকে গ্রাহকরে মিটার অনুযায়ী বিল তৈরী না করে মনমত বিল তৈরী করে তারা বিল আদায় করেছে। এদিকে জুন মাসে বাড়তি বিল আসায় বিপাকে পড়ে গ্রাহকরা। তারা মিটারের কাছে না গিয়ে ঘরে বসে বিল করে আসছে।
জানা গেছে, ৭৫ ইউনিটের নীচে হলে গ্রাহককে ৪টাকা হারে বিল দিতে হয়। কিন্তু যখন মনগড়া বিল তৈরী হয় তখন ৭৬- থেকে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত ৫.৪৫টাকা হারে বিল দিতে হয়। এতে গ্রাহক পল্লী বিদ্যুতকে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়।
এসময় বক্তব্য রাখেন, গ্রাহক আরমান হোসেন. সাহাবউদ্দিন রিংকন, সাজ্জাদ হোসেন সাজু, নাজিমুর রহমান ফাহাদ, আমজাদ হোসেন বিজয়, সিহাবউদ্দিন রুপক, মেহেদী হাসান রাকিবসহ প্রমুখ। বক্তারা বলেন, প্রতিমাসে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি তাদের মনগড়া বিল তৈরী করে। এতে এতে গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এদিকে কমলনগর-রামগতিতে একটি মাত্র জোনাল অফিস হওয়া কমলনগরের গ্রাহকরা রামগতি উপজেলায় গিয়ে অফিসে হয়রানি শিকার হচ্ছেন।
মানববন্ধন শেষে গ্রাহকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেন।
লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহক আবু ছিদ্দিক, করোনায় লকডাউনের মধ্যেও প্রতিমাসে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেছেন। তবুও তার বিল এসেছে গত কয়েক মাসের তুলনায় দ্বিগুন। একই অবস্থা তাঁর প্রতিবেশি নুর নবী, মো. মোহসেন, খলিলুর রহমানসহ অনেকের। এ বিল হাতে পেয়ে দিশেহারা এসব গ্রাহক ছুটে আসেন লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয়ে। তাদের জানানো হয়, পরিশোধ করা পুরনো বিল তাদের নতুন বিলে যুক্ত হওয়ায় তা দ্বিগুন হয়েছে। পরে দীর্ঘ হয়রানির পর সে বিল সংশোধন করা হয়।
এ ভুতুড়ে বিলের কবলে পড়ে এমন হাজার হাজার গ্রাহক এখন ভিড় করছেন লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুতের দফতরগুলোতে।এছাড়াও, বিলের কপিতে মিটার রিডিংয়ের স্থানে ব্যবহৃত ইউনিট শূন্য দেখালেও ইচ্ছে মতো বিলের অংক বসিয়ে তা আদায় করছে লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদুৎ সমিতি।ভুক্তভোগী ও সরেজমিন জানা গেছে, গ্রাহকরা মার্চ এবং এপ্রিল মাসের বিল পরিশোধ করলেও, বকেয়া দেখিয়ে মে মাসের বিলের সঙ্গে তা আবার যোগ করা হয়েছে।জানুয়ারী বা ফেব্রুয়ারী মাসে যে বিল এসেছে এখন তার দ্বিগুন নেয়া হচ্ছে। মিটার রিডিং না দেখেই, অফিসে বসে খামখেয়ালি মতো এ বিল তৈরী করা হচ্ছে।
জুনের শুরু থেকে হাজারো গ্রাহক এমন অভিযোগ নিয়ে লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয়ে ভীড় করছেন।শুধু যাদের পুরোন বিল নতুনের বিলের সাথে যুক্ত হয়েছে, তাদের নানা হয়রানির বিল সংশোধন করা হচ্ছে। যেসব বিল মিটার রিডিং না দেখে খামখেয়ালী মতো করা হয়েছে। সে বিষয়ে কোন সুরাহা করছে না পল্লী বিদ্যুৎ।
এতে হয়রানির শিকার গ্রাহকরা ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করছেন।এছাড়া প্রতিষ্ঠানটিতে স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক সুরক্ষা দূরত্ব মেনে চলার বালাই নেই।
ক্ষুব্দ গ্রাহকরা জানান, ‘করোনাকালীন সময়ে জনগণকে ঘরে থাকার জন্য বলা হলেও পল্লী বিদ্যুতের ‘গলাকাটা’ বিলের কারণে ঘর থেকে বের হতে হয়েছে।লকডাউনের মধ্যে সড়কে যানবাহন না থাকায় ভোগান্তি নিয়ে বিদ্যুৎ অফিসে আসতে হয়। অফিসে লোকজনেরও অনেক ভিড়। ভিড়ের মধ্যেই বিল সংশোধন করে তা পরিশোধ করতে হয়েছে।বাস্তবতার সাথে বিলের এমন সামঞ্জস্য না থাকলে করোনাকালীন ঝুঁকি নিয়ে আমাদের অফিসে আসতে হতো না। এলাকাভিত্তিক ব্যাংকের শাখা বা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে বিল পরিশোধ করা যেতো।
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. আবু তাহের বলেন, ‘করোনাকালীন সময়ে আমাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া মাঠ পর্যায়ের দায়িত্বরত কর্মীরা করোনার ভয়ে ঠিকমতো গ্রাহক প্রান্তে পৌঁছে রিডিং আনতে পারেনি।ফলে বিদ্যুৎ বিলে কিছুটা সামঞ্জস্য রয়েছে। কিন্তু গ্রাহক অফিসে বিলের কপি নিয়ে আসলে তা সমন্বয় করে দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বিল বেশি নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। কেউ বেশি দিলেও গ্রাহকের নিদ্দিষ্ট একাউন্টে পরবর্তী বিলের সাথে তা সমন্বয় করা হয়। যাদের বিলের সমস্যা আছে তারা যেন অফিসে এসে ঠিক করে নেয়।’গ্রাহকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেবা দেওযার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা অফিসে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রেখেছি। আমাদের কর্মীরা সার্বক্ষণিক মাস্ক ব্যবহার করে গ্রাহক সেবা দিতেছে। কিন্তু গ্রাহকরা যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানে তাহলে আমাদের কি করণীয় আছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বল্প কর্মী থাকা স্বর্তেও আমরা নিরলসভাবে বিদ্যুৎ সেবা প্রদান করে যাচ্ছি।’