কাণ্ডে ফুটছে ফুল। ফুল উজ্জ্বল গোলাপী রঙের। সৌরভ ছড়াচ্ছে। পাপড়ি গোলাকার কুণ্ডলী পাকানো। ফুটন্ত ফুলের পরাগ কেশর দেখতে সাপের ফনার মতো। আর এ কারণেই গাছটির নাম নাগ লিঙ্গম। এটি দুর্লভ প্রজাতির বৃক্ষ। তবে ফল গোলাকার বলের ন্যায়। রঙ সফেদার। ময়মনসিংহের গৌরীপুরে প্রায় দেড়শ’ বছরের পুরনো এ বৃক্ষ।
এটি আমাজন অঞ্চলের। শরৎ মৌসুমে সাধারণত ফুল আসে। তবে এবার জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ফুল যেন আগেই ফুটছে। বর্ষার প্রথম দিনেই এ ফুলের সুগন্ধে চারপাশ মৌ-মৌ করছে। গৌরীপুর থানার নতুন ভবনের পাশেই এ বৃক্ষের অবস্থান।
কালীপুরের তৎকালীন জমিদার উপেন্দ্র কিশোর রায় প্রায় দেড়শ’ বছর আগে অনেকগুলো রয়েল পামগাছের সঙ্গে ভারত থেকে এই নাগ লিঙ্গম গাছের চারা আনেন। গাছটি জমিদারের বাসভবনে রোপণ করেছিলেন। জনশ্রুতি আছে, হাতির পেটের অসুখের প্রতিষেধক হিসেবে ওই গাছের কচি পাতা কার্যকর ভূমিকা রাখত।
দেশের প্রতিকূল আবহাওয়ায় বাঁচিয়ে রাখার জন্য জমিদার আমাজন অঞ্চল থেকে এ গাছটি এনে রোপণ করেন।
এলাকাবাসী জানান, এ গাছের ফুল স্বয়ং নাগ-নাগিনী পাহারা দেয়। এ কুসংস্কারের কারণেই প্রতিবছর নাগ পঞ্চমীতে এ গাছের গোড়ায় পূজা-অর্চনা করা হতো। নাগকে সন্তুষ্ট করতে জমিদার আমলে এ প্রথা চালু ছিল। বর্তমানে সাপের ভয়ে গাছের সন্নিকটে সহসায় কেউ যেতে চায় না।
দেশ ভাগের পর জমিদাররা ভারতে চলে গেলে পরিত্যক্ত এ বাড়িতে বর্তমানে গৌরীপুর থানার কার্যক্রম চলছে। গাছটি প্রতি বছর শরৎকালে ফুল ফুটিয়ে সৌরভ ছড়ায়।
কাণ্ডে ফুল ফুটলেও শাখা-প্রশাখায় কোনো্ ফুল ফোটে না। কয়েকবার বীজ সংগ্রহ করে চারা উৎপাদনের চেষ্টা করেও সফল হয়নি কেউ। ফলের ওজন প্রায় ২ কেজি। দেখতে সুন্দর হলেও ফলের স্বাদ খুবই তিক্ত। পশু-পাখিও এই ফল খায় না। বৃক্ষের পাতার রঙ গাঢ় সবুজ। বহুদূর থেকে ফুলের সুবাস পাওয়া যায়। কিন্তু ফুলের সুবাস তীব্র নয়।
গৌরীপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সাবেক সহকারী অধ্যাপক আজহারুল হক বলেন, দুর্লভ নাগ লিঙ্গম গাছের ব্যাপক ওষুধি গুণ রয়েছে। এর ফুলের কলি দিয়ে রস তৈরি করে খাওয়ালে প্রসূতির সন্তান প্রসব সহজ হয়। এর মাঝবয়সী পাতা দিয়ে তৈরি পেস্ট দাঁতের পাইরিয়া ও ক্ষয় রোগ নিরাময়ে ব্যাপক কার্যকর। এ গাছের বাকল দিয়ে বহুমূত্র রোগের ওষুধ তৈরি করা হয়। পাশাপাশি এ গাছের কাঠ অত্যন্ত মজবুত। লালচে বাদামি রঙের এ কাঠ রেলের স্লিপারসহ ভারি কাজে লোহার পরিবর্তে ব্যবহার করা যায়।
তিনি আরও জানান, এত সব গুণ থাকা সত্ত্বেও শুধু প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এ দেশে নাগ লিঙ্গম গাছের বিস্তার করা সম্ভব হচ্ছে না। স্বাভাবিক নিয়মে বীজ থেকে চারা উৎপন্ন হওয়ার কথা থাকলেও প্রচণ্ড উঞ্চ অঞ্চলের গাছ বলে এ গাছের বীজ থেকে অঙ্কুরোদগম এ দেশে হয় না। তবে গুটি কলম করে গাছের বংশ বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে তিনি জানান। প্রায় ২৫ বছর আগে এক বৃক্ষ জরিপে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীগণ হিসাব করেছেন বাংলাদেশে ৫২টি নাগেশ্বর বৃক্ষ আছে। তবে বর্তমানে এর সংখ্যা কমে ১৬’তে দাঁড়িয়েছে।