সিলেটে কোথাও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। গ্রাম, হাটবাজার থেকে শুরু করে নগরীতে শারীরিক দূরত্ব মানার বালাই নেই। মাস্ক ও গ্লাভস পরার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ মানুষই উদাসীন। অসম্ভব ছোঁয়াচে করোনার মহামারীর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে চলছে সবকিছুই। ফলে বাড়ছে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা, বাড়ছে লাশের সারি। আক্রান্ত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এদিকে নতুন করে সিলেট নগরীর ১৯টি ওয়ার্ডকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রোগীর সংখ্যা বিবেচনা করে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে ভাগ করে বৃহস্পতিবার বিকালে সিলেটের জেলা প্রশাসনের কাছে একটি চিঠি দিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল। বিষয়টি চূড়ান্ত করতে দফায় দফায় বৈঠক চলছে।
জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশন থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেও বাগে আনা যাচ্ছে না ঘর থেকে বেরিয়ে আসা নিয়ন্ত্রণহীন মানুষকে। জেলা প্রশাসন বলছে, মানুষকে সচেতন করতেই অভিযান চালানো হচ্ছে। অভিযানের মূল টার্গেট হচ্ছে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা এবং ঘরে রাখা। কিন্তু কিছু মানুষ অহেতুক ঘর থেকে বের হচ্ছে। ফলে সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি মানুষের ভিড় লেগেই আছে পথেঘাটে। শুক্রবার ছুটির দিনেও বন্দর, তালতলা, সোবহানিঘাট, কীনব্রিজের মুখ ও বাস টার্মিনাল এবং কদমতলী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে মানুষের ভিড়। নগরীর বিভিন্ন স্থানে মানুষের জটলাও দেখা গেছে। সীমান্তবর্তী উপজেলা কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট ও জকিগঞ্জে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন হাটে মানুষের ভিড় লেগে থাকছে। অথচ গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলা অনেক আগেই রেড জোনের তালিকায়। বিশ্বনাথ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জে একই অবস্থা। বিশেষ করে চায়ের দোকানে মধ্যবয়সীদের ভিড় বেশি। তরুণরাও পিছিয়ে নেই।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শারমিন সুলতানা যুগান্তরকে বলেন, লকডাউন দিতে কাজ করছে স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে বিভিন্ন উপজেলায়ও কাজ চলছে। পুরো কাজ শেষ হতে আরও দু-একদিন লাগতে পারে। সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চিঠিতে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৯টি ওয়ার্ডকে রেড জোন, ২টি ওয়ার্ডকে ইয়েলো জোন ও ৬টি ওয়ার্ডকে গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১ থেকে ৯, ১২ থেকে ১৪, ১৬ থেকে ১৭, ১৯ থেকে ২২ ও ২৭নং ওয়ার্ডকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ১০ ও ১৮নং ওয়ার্ড ইয়েলো জোন ও ১১, ১৫, ২৩, ২৪, ২৫ ও ২৬নং ওয়ার্ড গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এর আগে সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে নগরীর ২৭ ওয়ার্ডের মধ্যে ২৪টি ওয়ার্ডকে রেড জোন চিহ্নিত করে লকডাউনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দেয়া হয়। ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসনের করোনাভাইরাস প্রতিরোধ মাল্টি সেক্টরিয়াল কমিটির সভাপতি এম কাজী এমদাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে একাধিক বৈঠক করা হয়। বৈঠকে বসে সিভিল সার্জনের দেয়া তালিকায় কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে। এলাকা ও রোগীর নাম-ঠিকানায় মিল পাওয়া যায়নি। ফলে তালিকা ঠিক করতে বলা হয়েছে সিভিল সার্জনকে। এ ব্যাপারে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা কাজ করে জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠিয়েছি। তারা লকডাউনের কাজ করবেন। নতুন সিডিউলে ১৯ ওয়ার্ড ও কয়েকটি উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অপরদিকে সিলেটে চিকিৎসকসহ নতুন করে আরও ৮৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।