বিশেষ প্রতিনিধি : রায়পুর উপজেলার হাটবাজারগুলোতে দেশীয় মাছের আকাল চলছে। পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ নিধন, কারেন্ট জালের ব্যাপক ব্যবহার, ধান ও সবজি খেতে মাত্রাতিরিক্তি বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে এখন নদী-খাল-বিল, জলাশয়ে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। মৎস্য আইনের প্রয়োগ না থাকায় কারেন্ট জালের অবাধ ব্যবহার, বিষ প্রয়োগ করে মাছ নিধন করার ফলে দেশীয় মাছ এখন বিলুপ্তির পথে। এ জেলার কমলনগর ও রামগতি উপজেলায় দেশী প্রজাতির ছোট মৎস্য সংরণ প্রকল্প রয়েছে। এ সকল মাছের আবাসস্থল যেন ঠিক থাকে তার জন্য খাল খনন করে মাছের পোনা ছাড়া হয়।
রায়পুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, প্রাচীনকালের ঐতিহ্যবাহী বড় পুকুর কিংবা দীঘি এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। পুনর্খনন ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে কিংবা জায়গা- সম্পত্তির মূল্য বৃদ্ধির ফলে অথবা খেতের জমি সংকট ও বাড়িভিটা তৈরির জন্য সেগুলো ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। মুক্ত জলাশয় বা জলাভূমি নেই বললেই চলে। খাল- বিলে এখন আর নানা প্রজাতির সুস্বাদু দেশীয় মাছ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
দেশীয় মাছের সংকট সম্পর্কে রায়পুর উপজেলা মৎষ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘ধানখেতে বিষাক্ত রাসায়ানিক দ্রব্য ও কীটনাশক প্রয়োগের ফলে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীগুলো বেঁচে থাকার এবং প্রজননসহ বংশ বিস্তারের অনুকূলে পরিবেশ পাচ্ছে না। বর্তমানে গ্রামাঞ্চলের অতিসুপরিচিত নানা প্রজাতির মাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। কৈ, টাকি, বাইন, পুঁটি, বাইলা, পুঁই, ভ্যাদা, মইল্যা, চিতল, শিং ও শোলা ইত্যাদি মাছ এখন গ্রামগঞ্জের হাটবাজারগুলোতে খুব একটা মিলছে না। দেশীয় ছোট ছোট শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়াসহ বিভিন্ন জল জলপ্রাণীও বিলুপ্তির পথে। মৎস্য কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের খাল, বিল ও অন্যান্য জলাশয় দেশি রকমারি মাছে ভরপুর ছিল। জাল নিয়ে একবার বিলে ঘুরে আসলেই মাছে ভরে উঠত ঝুঁড়ি। কিন্তু এখন সেই অবস্থা আর নেই। এর অন্যতম কারণ হল দেশীয় মাছ প্রাকৃতিকভাবে বংশ বিস্তার করত। এখন বিভিন্ন সবজি ও ধানখেতে এবং মৎস্য প্রকল্পে মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে। এছাড়া আধুনিক পদ্ধতিতে মাছচাষ করতে গিয়ে নির্দিষ্ট প্রজাতির কিছু মাছই পুকুরে রয়েছে। অল্প সময়ে অধিক লাভের আশায় নির্দিষ্ট কিছু মাছ ছাড়া মৎস্য চাষিরা অন্য কোন দেশীয় মাছের চাষ করছে না। ’
তিনি আরো জানান, এখন শুস্ক মৌসুম, দেশীয় মাছ পাওয়ার ভরা মৌসুমও বটে। এই সময়ে খাল-বিল ও অন্যান্য জলাশয়গুলোতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়ার কথা। কিন্তু বর্ষা মৌসুমের খাল-বিলে সামান্য পানি বাড়লেই কারেন্ট জালে ছেয়ে যায় খাল-বিল। ফলে দেশীয় মাছ ও মা মাছ কারেন্ট জালে আটকে পড়ে। কারেন্ট জাল ব্যবহার, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ মৎস্য আইনে নিষিদ্ধ হলেও এর আইন আছে কিন্তু প্রয়োগ নেই। খাল-বিল দিন-রাত প্রকাশ্যে এ নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার অব্যাহত থাকলে মাছ বংশ বিস্তার হবে না। আগামীতে মাছের আকাল স্থায়ীভাবে রূপ নেবে।